ঋণ করে ঘি খাওয়া!
রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:১০

ঋণ করে ঘি খাওয়া!

সম্পাদকীয়

প্রকাশিত: ২৭/০৫/২০২৪ ০৯:২৩:৫৬

ঋণ করে ঘি খাওয়া!


ঋণ করে ঘি খাওয়া-বলে একটি প্রবাদ আছে। অপরিনামদর্শিতা ও বিলাসিতা বুঝাতে এটা ব্যবহৃত হয়। তেমন কোন প্রয়োজন না থাকা সত্বেও এমনকি এর চেয়ে শতগুণ বেশি জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকা সত্বেও প্রায় ১১ হাজার কোটি ব্যয় করে নির্মাণ করা হয় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু ট্যানেল। এই অর্থের ৭ হাজার কোটি টাকাই আবার চীন থেকে ঋণ করে আনা। অথচ টানেলে এখন দৈনিক টোল আদায় হচ্ছে গড়ে মাত্র ১২ লাখ টাকারও কম।

এভাবে আয় হলে এই অর্থ থেকে চীনের ঋণের শোধ পরিশোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। দেখা যাচ্ছে আয়ের চেয়ে টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনা ও রক্ষণা-বেক্ষণের ব্যয় অনেক বেশি। অর্থাৎ ব্যয় দৈনিক ৩৭ লাখ টাকা। তাই চীনা ঋণ শোধ করতে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে।

সচেতন মহলের জিজ্ঞাসা, দেশে কর্ণফুলী ট্যানেলের চেয়েও বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ থাকা সত্বেও এমনকি অগ্রাধিকার বিচারে দেশ ও জাতির জন্য অনেক কাজ অপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ থাকা সত্বেও কর্ণফুলী ট্যানেলের মতো কম গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যয়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়নের কী এমন তাড়া ছিলো কর্তৃপক্ষের, যে ঋণ করেও তা করতে হবে? বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে যখন ব্যয় করার মতো অর্থ নেই, তখন কঠিন শর্তে ঋণ করে ট্যানেল তৈরি করা কতোটুকু যৌক্তিক?

সম্প্রতি দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় মিডিয়ায় ‘বঙ্গবন্ধু ট্যানেলে গাড়ি কম, আয় কম, ব্যয় বেশি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যে পরিমাণ যানবাহন চলার আশা করা হয়েছিলো, তার চেয়ে অনেক কম চলছে। চীনা ঋণ শোধ করতে লাগবে ভর্তুকি।

সেতু কর্তৃপক্ষের হিসাবে ট্যানেল দিয়ে এখন পর্যন্ত দিনে গড়ে সাড়ে চার হাজারের কিছু বেশি যানবাহন চলাচল করেছে। আগে ধারণা ছিলো, এর অন্তত ৪ গুণ বেশি যানবাহন বলবে। চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘চায়না কমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানী ট্যানেলটি নির্মাণ করেছে এখন টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজও পেয়েছে তারা। চীনা ঋণ প্রকল্পের প্রধান শর্ত হলো, তাতে চীনা ঠিকাদার কাজ করবে, কোন দরপত্র আহবান করা যাবে না। অভিযোগ রয়েছে, এ ধরণের শর্তের প্রকল্পে ব্যয় অনেক বেশি হয়।

প্রশ্ন হচ্ছে, এতো কঠিন শর্তে এতো কম গুরুত্বপূর্ণ আয়ের ব্যাপারে একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যত সম্পন্ন এই ট্যানেল প্রকল্পটি এ সময়ে না করলে কী এমন ক্ষতি বা অসুবিধা হতো চট্টগ্রামবাসী বা বাংলাদেশের জনগণের। এই ট্যানেল ছাড়া তো এতোদিন চলাচল ও যোগাযোগ হয়েছে। ভবিষ্যতে দেশের নিজস্ব অর্থায়নে এটা করলে এমন কোন মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা ছিলো না দেশ বা দেশের অর্থনীতির। কী প্রয়োজন ছিলো এতো কঠিন শর্তে এতো ব্যয়বহুল অলাভজনক এই প্রকল্প বাস্তবায়নের? এসব প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন মানুষের মনে।

অনেকের অভিযোগ, শুধুমাত্র অর্থ লুটপাটের জন্যই এমন একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যত সম্বলিত অলাভজনক এমনকি লোকসানদাতা প্রকল্প গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর এভাবে হাজার হাজার কোটি লুটে নিয়ে দেশের ঘাড়ে ঋণের একটি বড়ো বোঝা চাপিয়ে দেন তারা। যে বোঝা বইতে হবে এদেশের দুর্বল অর্থনীতি তথা দরিদ্র জনগণকে বছরের পর বছর ধরে।

সম্পাদকীয়

সিলেটজুড়ে


মহানগর