অর্থনীতিতে ইতিবাচক বার্তা
রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৯

অর্থনীতিতে ইতিবাচক বার্তা

সম্পাদকীয়

প্রকাশিত: ২৯/০৮/২০২৪ ০৯:১৯:৩৯

অর্থনীতিতে ইতিবাচক বার্তা


বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ডঃ আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, রিজার্ভ আর কমবে না, বরং বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আর ডলার বিক্রি করছি না। আমাদের লক্ষ্য হলো রিজার্ভ ঠিক রেখে আমদানি-রফতানির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বজায় রাখা। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্ণরের রিজার্ভ সংক্রান্ত এমন বক্তব্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বিগত কয়েক বছর ধরে দেশের রিজার্ভ নিয়ে যতো উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা দেখা গেছে দেশের সচেতন মহলে, আর কোন বিষয় নিয়ে এতোটা লক্ষ্য করা যায়নি। প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকার রিজার্ভ তলানীতে পৌঁছে যাবার ফলে দেশটি দেউলিয়া হয়ে পড়েছিলো। সেই আশংকা থেকে সচেতন মহলও বাংলাদেশে হওয়ার ভয়ে ভীত ছিলেন, যেহেতু রিজার্ভ চুরি, রিজার্ভ নিয়ে লুকোচুরি এবং দেশ থেকে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অর্থ তথা ডলার পাচার নিয়ে তোলপাড় চলছিলো দেশব্যাপী।

এছাড়া টাকার অবমূল্যায়ন অর্থাৎ ডলারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও উঠানামা ছিলো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। এখন এসব বন্ধ হয়েছে দক্ষ নেতৃত্বের ফলে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর সালেহ উদ্দীন আহমদ ও ডঃ মনসুরের মতো বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের যোগ্য নেতৃত্ব ও পরামর্শ পেলে দেশের প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাংক খাতও ঘুরে দাঁড়াবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। ডলার সংকট নিরসন, বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বন্ধ এবং পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এর ফলে অচিরেই দেশের অর্থনীতি মাথা তুলে দাঁড়াবে, এমন প্রত্যাশা সচেতন মহলের। খেলাপী ঋণ আদায়ে ইতোমধ্যে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকার, এখনো তা জানা যায়নি।

অনেকের মতে, খেলাপী ঋণ যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব হলে ব্যাংক খাত দ্রুত চাঙ্গা হয়ে ওঠবে। তবে ঋণ প্রদান ও অর্থ আত্মসাতকারী অভিযুক্তদের অর্থ উত্তোলনে যে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা অবশ্যই অভূতপূর্ব ও কার্যকর পদক্ষেপ। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ আকাশচুম্বী। এসবই চরম দুর্নীতিবাজ হাসিনা তথা তার সরকারের দুর্নীতির ফল। এতো বিশাল ঋণ ও দুর্নীতির কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়া এবং আর্থিক লেনদেনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। তবে বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় বিশেষভাবে নোবেল জয়ী বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে থাকায় বাংলাদেশের ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলোসহ বিশ্বের উন্নত ও শক্তিশালী দেশসমূহের মাঝে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের আস্থা ফিরে এসেছে অনেকখানি।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মিডিয়া ‘দ্য ওয়্যার’-এ প্রকাশিত বাংলাদেশ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরের পর বছর ‘সাউথ ব্লক’ (ভারত সরকার) হাসিনার রাজনৈতিকভাবে দুর্নীতিপরায়ন সরকারের ব্যাপারে অন্ধ থেকেছে। এটি তার ঘনিষ্ঠ মিত্র এই সরকারকে দেশ থেকে বিপুল অংকের অর্থ পাচার করতে সহায়তা করেছে, যা আনুমানিক ১৫০ বিলিয়ন ডলার বা ১৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।

এই প্রতিবেদন থেকে বুঝা যায়, কী বিপুল পরিমাণ অর্থ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্য ও ক্ষমতার ঘনিষ্ঠরা লুটপাট করেছে এবং দেশের অর্থনীতিতে কতোটা ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। স্বৈরাচারী হাসিনা আরো কিছুদিন ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশে পুরোদস্তুর দুর্ভিক্ষ দেখা দিতো। কিন্তু বিপ্লবের ফলে তার ক্ষমতাচ্যুতিতে এক অনিবার্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছে এদেশ। শুধুমাত্র অর্থ পাচার বন্ধ হওয়ায় শিগগিরই দেশের অর্থনীতিতে এর সুফল লক্ষ্য করা যাবে, এমন অভিমত অর্থনীতিবিদদের।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে জ্বালানীর দাম কমানোর কথা ঘোষণা করেছেন। বলা বাহুল্য, জ্বালানীর মূল্যের ওপর পণ্য ও সেবার মূল্য বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাই জ্বালানীর দাম কমলে সব ধরনের পণ্য ও সেবার দাম কমে আসবে, যা খাদ্যপণ্য থেকে গাড়িভাড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। বিগত সরকারের সৃষ্ট জঞ্জাল জটিলতা ও বিশৃংখলা এবং বর্তমানে দেশের একটি বড়ো অংশে বন্যার ফলে চালসহ অনেকগুলো নিত্যপণ্যের দাম কমছে না। শাকসবজিসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম যখন নিম্নমুখী কিংবা স্থিতিশীল তখন প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম না কমে আরো বৃদ্ধির বিষয়টি মেনে নেয়ার মতো নয়। এদিকে বর্তমান সরকারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোযোগ দিতে হবে, এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের একটি মাসও অতিক্রান্ত হয়নি। যথেষ্ট সময় পেলে ডঃ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত তার সরকার দেশের সংস্কার ও উন্নয়নে ইতিহাস সৃষ্টি করবে এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর।

সম্পাদকীয়

সিলেটজুড়ে


মহানগর