শুভ নববর্ষ ১৪৩২
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৭

বিশেষ সম্পাদকীয়

শুভ নববর্ষ ১৪৩২

সম্পাদকীয়

প্রকাশিত: ১৪/০৪/২০২৫ ০৩:১৫:২০

শুভ নববর্ষ ১৪৩২


পুরোনো জরা ও গ্লানি ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার দিন আজ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে চলবে নানা উৎসব-আয়োজন। তাতে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার প্রয়াস থাকবে। দোকানিরা সারা বছরের হিসাব মিলিয়ে খুলবেন হালখাতা। বিভিন্ন স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা। বাঙালির জীবনে বছরে একবারই আসে এমন দিন, যা একান্তই আমাদের জাতিসত্তার অংশ। আমাদের বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো-এটি ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সবার উৎসব। তবে বর্তমানে এ উৎসব হয়ে উঠেছে কিছুটা শহরকেন্দ্রিক। অথচ গ্রামই এদেশের প্রাণ। গ্রামের মানুষ, মূলত কৃষকরাই বাংলা দিনপঞ্জি অনুসরণ করে থাকেন। বাংলা ঋতুচক্র মেনে করেন চাষাবাদ। সারা দেশে নববর্ষের আনন্দ-উদ্যাপন ছড়িয়ে দিতে তাই গ্রামীণ জীবনেও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে হবে। বর্ষবরণের আয়োজন তাতে হয়ে উঠবে আরও সর্বজনীন।

পহেলা বৈশাখ ভোরবেলা সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠান বর্ষবরণ উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটিও আমাদের এক ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে। আজকাল কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও এগিয়ে আসছে এ ধরনের অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায়। গত বছরের ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবারও পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানগুলোয় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম হয়ে থাকে, এটা প্রমাণ করে আমরা আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি যত্নশীল। তবে বন্ধ হয়নি ফ্যাসিবাদী অপশক্তির তৎপরতা। আমরা সব ধরনের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে একটি গণতান্ত্রিক, শুদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে চাই।

বাংলা নববর্ষের হাত ধরে প্রায় একই সময়ে উদযাপিত হয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈসাবি, বিজু ইত্যাদি উৎসব। চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখের নানা আয়োজন চলে বিভিন্ন পাহাড়ি গোষ্ঠীর মধ্যে। উপমহাদেশের অন্যান্য জাতির নববর্ষও আসে প্রায় অভিন্ন সময়ে। নিজেদের বর্ষবরণ উৎসবে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি আমরা যদি অন্যদের এ ধরনের উৎসবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই এবং তাতে অংশ নিই, তাহলে তা শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

বাংলা সনের প্রবর্তন হয় খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে। নববর্ষে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে দোকানে দোকানে হালখাতা খোলার রীতি আজও প্রচলিত। বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ অর্থনীতিতে একধরনের প্রাণসঞ্চার হয় প্রতিবছর। হস্তশিল্পের প্রসারে এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। শহরাঞ্চলে বুটিক ও ফ্যাশন শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ার বিষয়টিও উৎসাহব্যঞ্জক। ক্ষুদ্র ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে এ শিল্প। এসব কর্মকাণ্ড আমাদের সংস্কৃতিতে যুক্ত করছে নতুন মাত্রা।

আজ পহেলা বৈশাখ আপন শিল্প-সংস্কৃতির ধারাকে ঋদ্ধ ও বেগবান করার শপথ নেওয়ার দিন। নতুন বছর দেশবাসীর জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনবে, এটাই প্রত্যাশা। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ-১৪৩২।

বিশেষ সম্পাদকীয়

সিলেটজুড়ে


মহানগর