
পরিত্যক্ত একটি ভাঙা ঘর। ওই ঘরে পায়ে শিকল পরা অবস্থায় মাটিতে বসে দিন কাটান বাবুল বৈষ্ণব। পাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ওষুধের পাতাগুলো যেন নিঃশব্দে চিৎকার করে জানান দিচ্ছে তার অসহায়ত্ব। কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। ঠিকমতো খাবারও জোটে না।
চরম এই অমানবিক ঘটনা ঘটেছে হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ঝিলুয়া গ্রামে। পারিবারিক কলহের কারণে স্বজনরা তাকে গত ২০ দিন ধরে শিকলবন্দি করে রেখেছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, বাবুল মোটেও মানসিক ভারসাম্যহীন নন।
৫০ বছর বয়সী ভুক্তভোগী বাবুল বৈষ্ণব জানান, ছোট একটি ঘটনা নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। ওই সময় তিনি স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। এ ঘটনার পর তার স্ত্রী, ছেলে ও কাকা মিলে তাকে মারপিট করে। এক পর্যায়ে তাকে পাগল হিসেবে চিহ্নিত করে শিকলবন্দি করে রাখা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমি একেবারেই সুস্থ। কোনো মানসিক সমস্যা নেই আমার। শুধু পারিবারিক ঝগড়ার কারণে ছেলে, স্ত্রী আর কাকা মিলে আমাকে বেঁধে রেখেছে। ঠিকমতো খাবার দেয় না। আমার বৃদ্ধা মা মাঝে মধ্যে কিছু খাবার দিলে তাকেও গালাগাল করা হয়। মাঝে মাঝে খাবারের থালা মায়ের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। আধা বালতি পানি দিয়ে গত ২০ দিনে মা আমাকে ৩-৪ দিন গোসল করিয়েছে। অথচ কখনো কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি।’
বাবুল বলেন, ‘ওরা আমাকে মারপিট করছে। আমার চোখ, বাহু এবং অন্যান্য স্থান ফুলে গেছে। কিন্তু ওষুধও এনে দেয়নি। আমার মা কিছু ওষুধ দিয়েছে।’
বাবুল দাবি করেন, তিনি অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছেন। ছেলেমেয়েকে বড় করেছেন। আটকে রাখার আগে তিনি কৃষিকাজের পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সবজি, বীজ বিক্রি করতেন।
অভিযুক্ত বাবুলের কাকা রথিন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘বাবুল প্রায়ই পরিবারের লোকজনকে মারপিট করে। দা নিয়ে হামলা করতে আসে। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে।’
তবে স্থানীয়রা ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের দাবি, বাবুল পুরোপুরি সুস্থ। শুধু পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও কলহের কারণে তিনি এই অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। তাদের মতে, পরিবারের পক্ষ থেকেই তার ওপর দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন চলে আসছে।
বদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দিলীপ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। তবে এখন যেহেতু আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আমি খোঁজ নেব। তবে আমার জানামতে তার আচরণ কিছুটা অস্বাভাবিক হলেও পাগল বলা যাবে না। এমনকি তিনি কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে বলেও আমার জানা নেই।’
আজকের সিলেট/ডি/এসটি
