
কোটা আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় সারাদেশের ন্যায় সিলেটজুড়ে চলছে গ্রেফতারের হিড়িক। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গ্রেফতারের তালিকায় শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। সাম্প্রতিক ঘটনায় সিলেট বিভাগে পুলিশ বাদী হয়ে ২৮টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় ২০ হাজারের বেশী মানুষকে আসামী করা হয়েছে। এসব মামলায় বুধবার পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন অন্তত ২০০ জন।
কারফিউ জারির পর থেকে বিশেষ করে সিলেট মহানগর এলাকায় গ্রেফতার অভিযান চললেও এখন উপজেলা এমনকি গ্রাম পর্যায়ে জোরদার করা হয়েছে। নগরীর পাশাপাশি সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার সকল উপজেলায় চলছে চিরুণী অভিযান। সিলেট মহানগর এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রেফতারের সংখ্যা ১২১ জন বলে জানানো হলেও প্রকৃত সংখ্যা বেশী হতে পারে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল ১০৭ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনায় সিলেট মহানগর এলাকায় ৯টি ও জেলায় ২টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এছাড়া কুমারগাও বিদ্যুৎ অফিসে হামলার ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে জালালাবাদ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে এসএমপির ৩ থানায় ১০টি এবং জেলার জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট থানায় ১টি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জালালাবাদ থানায় ৪টি, কোতোয়ালী থানায় ৫টি ও দক্ষিণ সুরমা থানায় ১টি মামলা করা হয়েছে।
এসব মামলায় ১৬ হাজার জনকে আসামী করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ১৩০ জনকে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলী, সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক সিটি কাউন্সিলার রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাবেক প্রচার সম্পাদক শামীম মজুমদার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আফসর খান, ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন রয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলায় ৫টি পৃথক মামলায় ৩ শতাধিক জনকে আসামী করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ২০ জনকে। তবে গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর, ধর্মপাশা, দিরাই, ছাতক ও জগন্নাথপুর থানায় পৃথক ৫টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসব মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনসহ ৩শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত জেলায় বিএনপি ও জামায়াতের ২০ জনের বেশী নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। বাসা-বাড়ী-অফিস এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চিরুণী অভিযান চলছে। নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন। যোগাযোগ করতে না পারায় পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
হবিগঞ্জ জেলায় সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলন ঘিরে ৫টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসব মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি.কে গৌছসহ সহস্রাধিক জনকে আসামী করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৩০ জনকে। জেলা বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক ঘটনায় জেলার সদর থানায় ১টি, শায়েস্তাগঞ্জে ১টি, বানিয়াচংয়ে ১টি, লাখাইয়ে ১টি ও আজমিরিগঞ্জ থানায় ১টি মোট ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা বাসা-বাড়ীতে থাকতে পারছেন না। গ্রেফতার আতঙ্কে সকল দলীয় নেতাকর্মী আত্মগোপনে রয়েছেন। এরপরও প্রতিদিন বাড়ছে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীর সংখ্যা।
মৌলভীবাজার জেলায় সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক থানায় ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। কয়েক’শ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। এসব মামলায় বুধবার পর্যন্ত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলীও রয়েছেন। গ্রেফতার এড়াতে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে রয়েছেন।
সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা ও সিনিয়র এএসপি সম্রাট হোসেন জানান, জেলায় জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট থানার ২টি মামলায় বুধবার পর্যন্ত ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতায় অংশগ্রহণকারীদের গ্রেফতারে জেলার থানায় থানায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ জানান, কোটা আন্দোলন নিয়ে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের সাড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পুলিশ কাজ করছে। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়নি। গ্রেফতারকৃত সবাই দুষ্কৃতিকারী।
আজকের সিলেট/ডি/এসটি
