রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি প্রয়োজন সমাজের সংস্কার
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:২২

রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি প্রয়োজন সমাজের সংস্কার

----------------

প্রকাশিত: ০৮/০৯/২০২৪ ১০:৪০:৪৩

রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি প্রয়োজন সমাজের সংস্কার


আহমদ রাজিয়া রুজি: ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় তরুণরা যখনই জেগেছে, তখনই সফলতার মুখ দেখেছে। বাংলাদেশের মানুষও সাম্প্রতিক জাগ্রত তরুণদের মাধ্যমে একটি সফল বিপ্লব প্রত্যক্ষ করলো। 'তরুণদের পরাজয় নেই'- এটা যেন তারা আবারও প্রমাণ করে দিল। বাংলাদেশের ছাত্র জনতা দীর্ঘদিনের দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে, স্বাধীনতাকে পুনরুদ্ধার করে নতুনভাবে রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছে। দুঃশাসনের ইতি ঘটিয়ে রাষ্ট্রের সংস্কার হয়েছে। এখন সময় এসেছে সমাজ সংস্কারের। কেননা রাষ্ট্র যেমন এতদিন দূর্নীতি ও অব্যবস্থাপনায় ভঙ্গুর ছিল, আমাদের সমাজও বিভিন্ন ব্যাধিতে ছিল জর্জরিত। রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজ সংস্কার এখন সময়ের দাবি। বর্তমান সমাজের বিশেষ কিছু সমস্যা হচ্ছে- আধুনিক অসভ্যতা, অপসংস্কৃতি চর্চা, প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি সাধন, নব্য যৌতুক প্রথা, নারী সহিংসতা, ইত্যাদি। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি যে সামাজিক রোগের প্রাদুর্ভাব সেটি হচ্ছে- আধুনিক অসভ্যতা। আধুনিক সময়ে আমরা সবাই নিজেদেরকে সভ্য বলে দাবি করি। অথচ একটা সমাজ জীবনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আমরা মূল্যবোধহীনতা, দায়িত্বহীনতা, অনিয়মানুবর্তিতার পরিচয় দেই। মানুষের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ না রাখা, পরমত অসহিষ্ণুতা, একসাথে মিলেমিশে থাকতে না পারা, সাম্প্রদায়িক মনোভাব, আনুষ্ঠানিক পরিবেশে অনানুষ্ঠানিক কার্যকলাপ, অহেতুক অন্যের সম্পদের ক্ষতি সাধন করা - এসবকিছুই আধুনিক অসভ্যতা। এখন আমাদের সমাজকে প্রকৃতঅর্থে সভ্য করে গড়ে তুলতে হবে। বিশ্বায়নের একটি কুপ্রভাব আমাদের সমাজে এসে পড়েছে; সেটি হচ্ছে- অপসংস্কৃতি চর্চা। বর্হিঃবিশ্বের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়া নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে বিদেশী সংস্কৃতির চর্চা একটি গর্হিত কাজ। এই দেশের ভাষা, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি আমাদের নিজস্ব সত্তার অংশ। তাই নিজের সংস্কৃতিকে ধারণ করা এবং চর্চা করার ব্যাপারে নিজেরা সচেষ্ট হব। তৃতীয়ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ক্ষতি সাধন। পরিবেশ রক্ষা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কাজ হলেও, সমাজের সাধারণ মানুষ যেন এ বিষয়ে এখনো খামখেয়াল। জলাভূমি ভরাট, বন উজাড় করা, পাহাড় কাটা ইত্যাদি কার্যকলাপের মাধ্যমে মানুষ পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলছে। এছাড়া যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনার স্তুপ রাখার ফলে বায়ু দূষণ হচ্ছে, পাশাপাশি বছরে বন্যার পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের সকলের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে এলাকার পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় সচেতন হওয়া। আমাদের সমাজের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে- নব্য যৌতুক প্রথা; যেটি পুরাতন যৌতুক প্রথার একটি নতুন সংস্করণ। এটাকে সরাসরি যৌতুক না বলে মেয়ের বাবার পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। অথচ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এটি একটি অভিশাপ। মধ্যযুগের এই অপপ্রচলন এখনও সমাজে বিদ্যমান। ধর্মীয় এবং সামাজিক উভয় দিক থেকে এটি একটি নিন্দনীয় কাজ। একটা সুন্দর সমাজে এটা বন্ধ করে উচিত। বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক সমস্যা হচ্ছে- নারী সহিংসতা। শহরে এর প্রকোপ তুলনামূলকভাবে কম হলেও, গ্রামাঞ্চলে এখনো নারীদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়। রক্ষণশীলতার নামে নারীদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়। তাছাড়া নারীরা সর্বত্র বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানিতে শিকার হয়। এই সমস্যা রোধে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি এবং সর্বাত্মক ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। আমাদের সমাজের উল্লেখ্য একটি অসুস্থ দিক হচ্ছে ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং প্রগতিশীলতার মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি। সমাজের এক শ্রেণী ধর্মীয় গোড়াঁমির কারণে অনেক স্বাভাবিক বিষয়েও অসহিষ্ণু আচরণ করে উগ্রতার পরিচয় দেন। অপরদিকে প্রগতির নামে আরেকটি শ্রেণী ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করে নাগরিক অধিকার হরণ করেন। সমাজের এই দুই পক্ষই নিন্দিত। ধর্ম বা আধুনিকতা যেটাই হোক, মধ্যপন্থা সব সময় সবার জন্য উত্তম। আর এ ক্ষেত্রে সহিষ্ণুতার চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপর্যুক্ত সমস্যাগুলো ছাড়াও আমাদের সমাজে যেসকল ব্যাধি বিদ্যমান সেগুলো হচ্ছে- শিশুশ্রম, মাদকাসক্তি, শিশুদের প্রযুক্তি আসক্তি, ব্যবসায় নৈতিকতাহীনতা। এখন সময় এসেছে এসকল সমস্যার দূরীকরণ করে সমাজকে নিষ্কলুষ করা। তাই ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু হোক সমাজ সংস্কারের কাজ।


লেখক: শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

আজকের সিলেট/ডি/এপি

সিলেটজুড়ে


মহানগর