ধ্বংসস্তূপের পথে ঐতিহাসিক নিদর্শন 'পাইলগাঁও জমিদার বাড়ি'
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫৩ AM

ধ্বংসস্তূপের পথে ঐতিহাসিক নিদর্শন 'পাইলগাঁও জমিদার বাড়ি'

জনি কান্ত শর্মা

প্রকাশিত: ০৫/১১/২০২৫ ১০:০৩:৫৬ AM

ধ্বংসস্তূপের পথে ঐতিহাসিক নিদর্শন 'পাইলগাঁও জমিদার বাড়ি'


একদা কুশিয়ারা নদীর বুকে যার প্রতিচ্ছবি দেখে মুগ্ধ হতো প্রজাকুল, যেখান থেকে পরিচালিত হতো এক বিশাল জমিদারির শাসন, সেই পাইলগাঁও জমিদার বাড়ি আজ কেবলই অতীতের এক করুণ প্রতিধ্বনি। কালের করাল গ্রাসে, অবহেলা আর উদাসীনতার নীরবতায়, ঐতিহ্যের এই সাক্ষী ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে মাটির সঙ্গে।

জমিদার ব্রজনাথ মিত্র ও রামনাথ মিত্রের হাতে গড়া এই প্রাসাদোপম অট্টালিকাটি ছিল স্থাপত্যশিল্পের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। এর কারুকার্যখচিত দেয়াল, সুউচ্চ স্তম্ভ, আর বিশাল বারান্দাগুলো যেন এক সমৃদ্ধ ইতিহাসের কথা বলে। কিন্তু আজ সেই কারুকাজে ফাটল, স্তম্ভগুলো জীর্ণ, আর বারান্দায় কেবল আগাছার রাজত্ব। ১৯৭১ সালের পর থেকে পরিত্যক্ত এই বাড়িটি যেন ইতিহাসের এক নীরব কান্না হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

স্থানীয় জনগণের বহুদিনের আকুতি আর গণমাধ্যমের চাপে অবশেষে সরকারিভাবে কিছুটা নড়াচড়া দেখা যায়। ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি দল বাড়িটি পরিদর্শন করে, এবং আশ্বাস দেয় যে এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে। সেই আশার আলোয় মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল যে তাদের ঐতিহ্য রক্ষা পাবে। কিন্তু চার বছর পেরিয়ে গেলেও সেই আশা আজও অধরা। পরিদর্শনের পর থেকে সংরক্ষণের কোনো কাজ শুরু হয়নি।

এই দীর্ঘসূত্রিতা আর প্রশাসনিক অবহেলায় আজ ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ মনে করেন, কেবল পরিদর্শন আর আশ্বাসের মধ্যেই যেন সরকারি উদ্যোগ সীমাবদ্ধ। অচিরেই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে, এই ঐতিহাসিক বাড়িটি একসময় কেবল বইয়ের পাতায় এবং মানুষের স্মৃতিতেই সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে। এটি হবে আমাদের ঐতিহ্যের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।

এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণের দাবি, সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দ্রুত আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে বাড়িটির সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজ শুরু করুক। এই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, এই নীরব মৃত্যু বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।

আজকের সিলেট/ডি/এসটি

সিলেটজুড়ে


মহানগর