গ্রাহকদের ব্যাংকে লাখ টাকা থাকার পরেও টাকা তুলতে গেলে দেওয়া হয় গ্রাহকদের ৩ হাজার টাকা। এমন অবস্থা চলছে সিলেটের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের একাধিক শাখায়। ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা থাকার পরেও চাহিদা মতো টাকা তুলতে না পারায় সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ এলাকার ন্যাশনাল ব্যাংকের গেটে তালা ঝুলিয়েছেন গ্রাহকরা। এ সময় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এ ঘটনাটি ঘটে। এর আগে মঙ্গলবার গ্রাহকরা টাকা না পেয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জের ন্যাশনাল ব্যাংকের আরও একটি শাখায় তালা লাগিয়ে দেন।
এদিকে, খবর পেয়ে মহানগর পুলিশের শাহপরাণ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রাহকদের শান্ত করে ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
শিবগঞ্জ ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড শাখার গ্রাহক কয়েছ আহমদ বলেন, অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা রয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে টাকা তুলতে আসলে ব্যাংক থেকে জানানো হয় তিন হাজার টাকার বেশি দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ জানতে চাইলে তাকে বলা হয়, ব্যাংকে টাকার সংকট রয়েছে। তাই আমরা গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাংকের গেটে তালা লাগিয়েছি।
একই ব্যাংকের গ্রাহক জুনেদ মিয়া বলেন, ব্যাংকটিতে টাকা রেখে বিপদে পড়েছি। টাকা তুলতে পারছি না। কিন্তু তারা টাকা জমা নেওয়ার সময় ঠিকই নিচ্ছি। গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে ব্যাংকটি।
ন্যাশনাল ব্যাংকের শিবগঞ্জ ব্রাঞ্চের গ্রাহক ফয়জুল কয়েছ বলেন, চিকিৎসার জন্য জায়গা বিক্রি করে ব্যাংকে ৮ লাখ জমা দিতে এলে ঠিকই জমা নিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। কিন্তু টাকা উত্তোলনের জন্য চেক নিয়ে এলে ৩ হাজার টাকার ওপরে আর দিচ্ছে না। এর বেশি টাকা উত্তোলন করতে পারবো না, এটা কীভাবে সম্ভব। এটা ব্যাংক না ডাকাতদের কারখানা? ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি এ সমস্যা সমাধান করতে না পারেন, তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানাবেন। অথচ জমা ও লোন দুটোই নিচ্ছে এবং দিচ্ছে।
তালা ঝোলালেন কেন প্রশ্নে ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, আমরা কি ভিক্ষুক নাকি না লোন নিতে এসেছি? আমাদের টাকা না দেওয়ায় আমরা ব্যাংকে তালা ঝুলিয়েছি। আমাদের মা-বোন প্রতিদিন টাকা জামা রাখেন, পরদিন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলে ব্যাংকে টাকা নেই।
ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড শিবগঞ্জ শাখার সিনিয়র অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ম্যানেজার সাব্বির হাসান বলেন, ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে গ্রাহকদের চাহিদামতো টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা এটি সমাধানের চেষ্টা করছেন। তারল্য সংকট কাটিয়া ওঠার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর প্রতিনিয়ত বক্তব্য দিচ্ছেন, যাতে ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিয়ে সংকট কাটিয়ে ওঠা যায়। গ্রাহকদের বিষয়টি সমাধানে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গ্রাহকদের অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান দেওয়া সম্ভব না। যারা লাখ টাকার চেক নিয়ে আসছেন টাকা উত্তোলনে, তাদের ১০ হাজার কিংবা এরচেয়ে কম অ্যামাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য বিষয়টি দ্রুতই সমাধানের চেষ্টা চলছে।
আজকের সিলেট/ডি/এসটি