অদম্য খালেদা জিয়া
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩৬

অদম্য খালেদা জিয়া

আজকের সিলেট ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭/০১/২০২৫ ১০:০০:২৪

অদম্য খালেদা জিয়া


বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। ৪৪ বছর আগে কঠিন ও দুর্যোগময় সময়ে তিনি দায়িত্ব নিয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল-বিএনপির।

বারবার মুখোমুখি হয়েছেন নানা চড়াই উৎড়াই ও ঝঞ্জাবিক্ষুদ্ধ পরিস্থিতির। তবে কোনোকিছুই টলাতে পারেনি তাকে। পাঁচবার হয়েছেন কারাবন্দী। সহ্য করতে হয়েছে নির্যাতন ও লাঞ্চনা। তবুও দলের নেতৃত্ব দিতে কখনোই পিছুপা হননি বেগম জিয়া। অটল ও অবিচল থেকেছেন সবসময়।

এরশাদ ও শেখ হাসিনার দীর্ঘ স্বৈরতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে একবারে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভদ্র, শান্ত ও মৃদভাষী হলেও, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন খালেদা জিয়া হলেন ইস্পাত কঠিন দৃঢ় মানসিকতার।

খালেদা জিয়া শত প্রতিকূলতার মধ্যেও শক্তহাতে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন বিএনপিকে। ওয়ান ইলেভেনের বিরাজনীতিকরণের সময় প্রচণ্ড চাপের মুখেও করেননি দেশত্যাগ।

এ কারণেই, তিনি ভূষিত হয়েছেন আপসহীন নেত্রী হিসেবে। দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে বলেন দেশনেত্রী।

এরশাদের পতনের পর, দেশের প্রথম গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে, বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে, প্রথমাবের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। এরপর প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন আরো দুইবার।

চার দেয়ালের মাঝখান থেকে বেরিয়ে এসে তিনি হয়েছিলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রথম নারী সরকারপ্রধান। আর মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়।

বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে প্রথমবারের মতো মুক্ত অর্থনীতিতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। উন্নয়নের এক নবদিগন্ত উন্মোচিত হয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পথ ধরেই তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন বহুদলীয় গণতন্ত্র চর্চা।

বিপথগামী কিছু সেনা কর্মকর্তার হাতে ১৯৮১ সালের ৩০ মে শহীদ হন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা এবং তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আকস্মিক ওই ঘটনার পর, এলোমেলো ও নেতৃত্বশূণ্য হয়ে পড়ে বিএনপি। ঘিরে ধরে অনিশ্চয়তা।

আর তখনই বিএনপির নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন বেগম জিয়া। ওই বছর থেকেই তিনি শুরু করেন দল গোছানো। পাশাপাশি চলতে থাকে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।

প্রথমে সদস্য; এরপর হন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে নির্বাচিত হন চেয়ারপারসন। তখন থেকে দলের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া এবং তার নেতৃত্বেই পূর্ণভাবে বিকশিত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থাকার সময়ই স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন খালেদা জিয়া। তার নেতৃত্বে ১৯৮৩ সালে গঠিত হয় সাত দলীয় ঐক্যজোট। এই ঔক্যজোট গঠনের মাধ্যমেই এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রথম আন্দোলন।

এরপর আসে ১৯৮৬ সালের নির্বাচন। আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে সেই নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। কিন্তু খালেদা জিয়ার অদম্য ও আপসহীন মানসিকতার জন্য সেই ভোট প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে অবিচল থাকে বিএনপি।

দৃঢ়চেতা খালেদা জিয়া ১৯৮৭ সাল এরশাদ পতনের একদফা ঘোষণা করেন। ওই কর্মসূচির নাম ছিলো ‘এরশাদ হটাও’। এরপর আসে ১৯৮৮ সালের আরেক পাতানো নির্বাচন। সেই নির্বাচনও বর্জন করে আন্দোলনে অটুট থাকেন খালেদা জিয়া। কারাবন্দী করা হয় তাকে।

কিন্তু দমে যাননি তিনি। কারামুক্ত হয়ে আবার শুরু করেন আন্দোলন। অবশেষে বিজয় আসে। দীর্ঘদিনের অবিরাম, নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর নব্বইয়ের গণঅভত্থাণে পতন ঘটে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের।

এরপর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিএনপি। দেশের সবেচেয়ে গ্রহণযোগ্য সেই ভোটে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র চর্চা ত্বরান্বিত হয়। ফিরিয়ে আনা হয় সংসদীয় গণতন্ত্র। প্রচণ্ড প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে সংসদ। সরকারি ও বিরোধীদলের সদস্যদের আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে প্রকৃত সংসদীয় চর্চার স্বাদ পায় দেশবাসী।

১৯৯৬ সালে নির্বাচনে স্বল্প সময়ের সরকারে তিনি সংবিধানে যুক্ত করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এরপর সরকার ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন খালেদা জিয়া। তবে তার নেতৃত্বগুণে ২০০১ সালের নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় ফিরে আসে বিএনপি। খালেদা জিয়া নির্বাচিত হন তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী।

এই মেয়াদ শেষে খালেদা জিয়ার ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরই ২০০৭ সালে, দেশের রাজনৈতিক আকাশে দেখা দেয় কালো মেঘের ঘনঘটা। ফখরুদ্দীন ও মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে বিরাজনীতিকরণের নীলনকশা প্রস্তুত করা হয়।

আর এরই অংশ হিসেবে বেগম জিয়াকে বিদেশের পাঠানো চক্রান্ত প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু বরাবরের মতো সেবারও অদম্য থাকেন বিএনপির চেয়ারপারসন। মাথা নত না করে অটল থাকেন তিনি। অবেশেষে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।

ওয়ান ইলেভেনের সময় নানাভাবে চাপে পড়ে যায় বিএনপি। তবে কারামুক্ত হয়েই বিএনপিকে গোছানোর কাজে নেমে পড়েন খালেদা জিয়া। নবম সংসদ নির্বাচনের সময়, সারাদেশ ঘুরে ঘুরে জনসভা ও পথসভা করেন তিনি।

সেই নির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবেও ভূমিকা রাখছিলেন তিনি। কিন্তু দেশের রাজনীতি তখন প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলছে। ঢাকা সেনানিবাসে খালেদা জিয়ার ২৮ বছরের আবাসস্থল কেড়ে নেয়া হয়।

এরপর দেশে শুরু হয় একের পর এক পাতানো নির্বাচন। সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে শেখ হাসিনার একের পর এক আয়োজন করেন পাতানো নির্বাচন। ওইসব নির্বাচনের লক্ষ্যই ছিলো, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ভোটের বাইরে রাখা। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন বিএনপির চেয়ারপারসন। তবে ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দণ্ড দিয়ে দিয়ে তাকে কারাবন্দী করা হয়। শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হলেও, উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া হয়নি বিদেশে।

অবশেষে পাঁচ আগস্ট গনঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনা সরকার। দীর্ঘদিনের স্বৈরতান্ত্রিকতার অবসান হয়। দীর্ঘদিনের বন্দীদশা থেকে মুক্ত হন বেগম খালেদা জিয়া। সফল হয় তার আন্দোলন-সংগ্রাম।

দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রায় খালেদা জিয়া বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে এক চুলও ছাড় দেননি। কোনো ভয় বা লোভের কাছে করেননি মাথা নিচু। শত অত্যাচারেও তিনি মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি। গণতন্ত্র ও ইসালামী মূল্যবোধের প্রশ্নেও বারবার তিনি নিজেকে দৃঢ় প্রমাণ করেছেন।

আজকের সিলেট/ডি/এসটি

সিলেটজুড়ে


মহানগর