সিলেটে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:২০

সিলেটের ১১ উপজেলায় প্রথম ধাপে তিন পদে লড়ছেন ৫৮ প্রার্থী

সিলেটে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৩০/০৪/২০২৪ ১১:৩৩:৩২

সিলেটে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ


সংসদ নির্বাচনের মতো বিএনপি-জামায়াতবিহীন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতারাই পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রার্থী হয়েছেন মন্ত্রী-এমপিদের স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনেরাও।প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলটির গড়ে তিনজন করে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটে ১ হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে টিকে আছেন ১ হাজার ৬৯৩ জন প্রার্থী।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপের ভোট হবে আগামী ৮ মে। এর আগেই চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সারাদেশে ২৫ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬ জন চেয়ারম্যান, ৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১০ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন। তাদের প্রায় সবই সরকারী দলের।

সারাদেশের মতো সিলেট বিভাগেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। হাতেগোনা কয়েকটি উপজেলায় বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্ররা প্রার্থী হয়েছেন। দলীয় নির্দেশনা মেনে ভোটে নেই জামায়াতের নেতারা। প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দলটির একাধিক নেতা হওয়ায় নির্বাচন হয়ে পড়েছে একপেশে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে সিলেট বিভাগের ১১ উপজেলায় ভোট গ্রহণ আগামী ৮ মে। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২৪ জনসহ মোট ৫৮ প্রার্থী। এরমধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৪ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থী।

সিলেটের ৪ উপজেলা, সুনামগঞ্জে ২, মৌলভীবাজারে ৩ ও হবিগঞ্জের ২ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছেন দলটির একাধিক নেতা। গত মঙ্গলবার প্রতীক পেয়ে মাঠে নেমে শক্তির জানান দিয়েছেন তারা। এতে আওয়ামী লীগের পদধারী অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। সিলেটের চার উপজেলায় ২৪ চেয়ারম্যান প্রার্থীর ১৭ জনই আওয়ামী লীগের। তারা কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।

তবে উপজেলা নির্বাচনের আগেই কোন্দল নিরসন চান সিলেট বিভাগের আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, সংসদ ও সিটি নির্বাচন ঘিরে দলে যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তাতে উপজেলায় ব্যাপক ভরাডুবি হতে পারে। দ্বন্ধ শেষ না হলে অনেক উপজেলায় বিএনপি নেতারা প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের জয় সহজ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট সদরে প্রার্থী হননি একাধিকবারের নির্বাচিত ও বর্তমান চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। কিন্তু ৬ প্রার্থীর চারজনই ক্ষমতাসীন দলের। শ্রমিক লীগ সিলেট জেলা সভাপতি এজাজুল হক মোটরসাইকেল প্রতীকে প্রচার চালান। তাকে টেক্কা দিতে আওয়ামী লীগ নেতা সুজাত আলী রফিক, সামসুল ইসলাম ও মিল্লাত আহমদ চৌধুরী বাড়ি বাড়ি ভোট চাইছেন। বাকি দু’জনের মধ্যে ডা. খলিলুর রহমান ও আহাদ মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

গোলাপগঞ্জে তিন প্রার্থীই আওয়ামী লীগের: কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। বর্তমান চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর কাদির শাফি এলিম, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ ও ব্রাজিল যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল ভোটারের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় লড়াই হবে আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক তেতলী ইউপি চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম, মোহাম্মদ জুয়েল আহমদ, বদরুল ইসলাম ও শামীম আহমদের মধ্যে। এ ছাড়া নাট্যাভিনেতা সাহেদ মোশারফ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন।

বিশ্বনাথে ১০ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫ জন: বাকিরা বিএনপি ঘরানার। যুক্তরাজ্যের ডরসেট আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল রোশন চেরাগ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আকদ্দুছ আলী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য শমসাদুর রহমান রাহিন, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ এস আলী এনামুল হক, জেলা পরিষদের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমদ, বিশ্বনাথ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতা সফিক উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক যুক্তরাজ্যপ্রবাসী গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশ্বনাথ স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট ইউকের যুগ্ম সম্পাদক সেবুল মিয়া ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন।

এছাড়া বিভাগের বাকি তিন জেলার সব উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। নিজ দলের লোকদের নিয়ে অনেক নেতা আছেন আতঙ্কে। কেউ কেউ সহিংসতার আশঙ্কা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, মাঠ উন্মুক্ত এবং প্রার্থীরা প্রচারে পরস্পরের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। এদিকে পরের তিন ধাপে হবে সিলেটের আরো ২৬ উপজেলায় নির্বাচন। ওই নির্বাচন ঘিরে এখনই বইছে উত্তাপ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, আমাদের মধ্যে জাতীয় ও সিটি নির্বাচন নিয়ে যে কোন্দল তৈরি হয়েছে, তা নিরসন হওয়া দরকার। তা না হলে এবার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবির শঙ্কা রয়েছে।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান বলেন, যে যার মতো প্রার্থী হলেও নির্বাচন উৎসবমুখর হবে এবং ভোটাররা পছন্দের প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন।

এদিকে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে অংশ নেয়ায়, সিলেট বিভাগের ১১ জনকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।

আজকের সিলেট/ডি/এসটি

সিলেটজুড়ে


মহানগর