উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর আওয়ামীলীগ
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৯

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর আওয়ামীলীগ

আজকের সিলেট ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৬/০৪/২০২৪ ১১:৩৬:২৮

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর আওয়ামীলীগ


বিতর্ক ও সমালোচনা এড়াতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা ও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। এই নির্বাচনে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন বা অবৈধ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না দলের এমপি, মন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা। কেউ এমনটি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ।

যেহেতু জাতীয় নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না তাই আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। এজন্য নিজেদের মধ্যে যেন আর কোনো দ্বন্দ্ব বা কোন্দল না বাড়ে এজন্য কঠোর অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। এই নিয়ে দলের তৃণমূল নেতাদের ডেকে দফায় দফায় সভা করছে।

ইতোমধ্যে রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাকর্মী ও বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে সভা করে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছে দলটি।

আওয়ামী লীগের স্পষ্ট বার্তা, উপজেলা নির্বাচনে কোনো অনিয়ম, ক্ষমতার প্রভাব দেখানো ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নেতারা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। প্রার্থীসংখ্যা বাড়লে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। ভোটার উপস্থিতি বেশি হলে কেউ নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে পারবে না। তাই নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করাই দলের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ জন্য নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। যে কেউ চাইলে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে। তবে দলের নেতারা যেন বিবাদে না জড়ায় এবং দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত না বাড়ে এজন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি নজরও রাখছে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, সমালোচনাকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। এ নির্বাচনে সংসদ সদস্যরা যেন কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ না করে সেই বিষয়ে তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো এমপি, মন্ত্রী উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে বা কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করে তাহলে তার বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। একাধিক বিভাগের তৃণমূল নেতাকর্মী, এমপি, মন্ত্রীদের সঙ্গে এ বিষয়ে সভা করে কঠোর বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিরোধ, দ্বন্দ্ব নিরসন না হতেই উপজেলা নির্বাচন ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরোধ ও বিভক্তি। কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা বলছেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের পর এবার উপজেলা নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। এই নির্বাচনে প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা ভাগ হয়ে পড়েছে প্রার্থীদের পক্ষে। আর এতেই বাড়ছে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব।

উপজেলা নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বিনষ্ট করার কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকার জন্য আওয়ামী লীগের এমপি, মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের প্রতি এক বার্তা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এতে তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় একটি মাইলফলক। নির্বাচন বানচালের বহুমুখী ষড়যন্ত্র ছিল। সেই প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে এসেছিল এবং নির্বাচনে সুস্পষ্টভাবে জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে।

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন দুটি ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে এবং ধাপে ধাপে উপজেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। এখানে মন্ত্রী-এমপিদের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করার সুযোগ থাকবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার কাজে নিয়োজিত প্রশাসনও শতভাগ নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে। কেউ কোনো ধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করলেও দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণের মতামতের সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটবে এবং ভোটাররা নির্বিঘ্নে নিজেদের ভোট দেবেন। নির্বাচনে কোনো প্রকার অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বিনষ্ট করার কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকার জন্য মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি ও নেতাকর্মীদের প্রতি সাংগঠনিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, সবাই নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা যাবে না। তারপরও যদি কেউ দ্বন্দ্ব বা বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়ে- সে দিকে দল নজর রাখছে। এরমধ্যে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সভা করে বিভিন্ন দিকsনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আওয়ামী লীগের একটি বড় দল। তাই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে, থাকবে। দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা কখনো কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিণত হয়। যখনই আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে নিজেরা নিজেরা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন সেটাই খারাপ দিক। নির্বাচনপরবর্তী সময় বিভিন্ন জায়গায় এটা হচ্ছে, তাই উপজেলা নির্বাচনে আমরা এটাকে নিরসন করার চেষ্টা করছি। আগামী দিনে যেন এ দ্বন্দ্ব ও সংঘাত না বাড়ে এজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি বিভাগের সঙ্গে এরমধ্যে সভা করে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আজকের সিলেট/ডিটি/এসটি

সিলেটজুড়ে


মহানগর