ইবাদতের বসন্তকাল রামজান এসেছে। রামজান বা রোজা ইসলাম ধর্মের পঞ্চম স্তম্ভ। আজ মঙ্গলবার, ১৪৪৫ হিজরীর পহেলা রামজান। মুমিনগণ নেকি অর্জনে রামজানে হৃদয়ে দেন শান। বছরের অন্যতম ফযীলতপূর্ণ মাস রামজান। প্রতি বছরের ন্যায় বাংলাদেশে আজ থেকে শুরু সিয়াম-সাধনার মাস রামজান। সারাদেশের ন্যায় পহেলা রোজা পালন করছেন সিলেটের ঈমানদারগণ। গত সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখার পর মুসল্লীগণ এশার নামাজে মসজিদকে মুখরিত করে তুলেন। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অত্যন্ত আবেগের সাথে আদায় করেছেন দীর্ঘ তারাবিহ নামাজ। পহেলা রামজানে সিলেটে ইফতার হবে সন্ধ্যা ৬টা ৪মিনিটে।
আহলান সাহলান, মাহে রামজান। আল্লাহ তাআলা পবিত্র আল কুরআনে বলেন- সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এ মাসে রোজা পালন করে। ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫ ও ১৮৩)।
শাবান মাস বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আকাশে একফালি বাঁকা চাঁদ উদিত হওয়ার মাধ্যমে রহমত, বরকত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে মুসলিম বিশ্বের দ্বারে ফিরে আসে পবিত্র রামজান মাস। বছরে ১২টি মাসে রামজান হল পৃথিবীর প্রতিটি মুসলমানের নিকট উৎসবের মাস। পবিত্র কুরআনে এই রামাজান মাসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেছেন : রামাজান মাস, যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য দিশারী এবং এতে পথনির্দেশ ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসে (স্বস্থানে) উপস্থিত থাকবে, সে যেন রোযা রাখে (সূরা বাকারা : ১৮৫) ।
এ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহর কাছে এ মাসের অসামান্য মর্যাদা রয়েছে। যেমনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই বলেন- ‘রোযা আমার জন্যে রাখা হয় এবং আমিই তার প্রতিদান দেবো।’
পরকালে যে তিনি কী পুরস্কার দেবেন তার কিছুটা ইঙ্গিত নবী কারিম (সাঃ) আমাদের দিয়েছেন। সে থেকে রোযাদারগণ নিশ্চয়ই পরিতৃপ্ত হবার আনন্দ পাবেন।
রাসূলে খোদা বলেছেন, ‘রমযান এমন একটি মাস, যে মাসে আল্লাহ তোমাদের জন্যে রোযা রাখাকে ফরজ করে দিয়েছে। অতএব যে ব্যক্তি ঈমানসহকারে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় রোযা রাখবে, তার জন্যে রোযার সেই দিনটি হবে এমন, যেন সবেমাত্র সে মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে। অর্থাৎ রোযাদার তার সকল গুণাহ থেকে মুক্তি পেয়ে নিষ্পাপ শিশুটির মতো হয়ে যাবে।
রামজানের চাঁদ দেখার সংবাদ জানানোর সাথে দেশের মুসলমানদের মাঝে বয়ে যায় ইবাদতের সমীরণ। সবাই প্রস্তুতি নেন তারাবীহ ও সেহরীর। রামজান আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস, কুরআনের ভাষায় যাকে ‘রামাযান’ বলা হয়েছে। মূল শব্দ রা-মীম-জোয়াদ । এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দহন, প্রজ্বলন, জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রামজান মাসে সিয়াম-সাধনা তথা রোজাব্রত পালনের মাধ্যমে মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আত্মসংযম ও কৃচ্ছ্রপূর্ণ জীবন যাপন করে এবং ষড়রিপুকে দমন করে মহান আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। এ মাসেই নাজিল হয়েছে মানবতার মুক্তির দিশারী পবিত্র আল কুরআন।
তাই মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “নিশ্চয়ই আমরা এটা (কোরআন) মহিমান্বিত রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, কিসে তোমাকে অবহিত করল মহিমান্বিত রজনী কী? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ”।
মাহে রমজান মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের নাম রামজান। রোযাকে বলা হয়েছে জুন্নাহ বা ঢালস্বরূপ। কারণ রোযার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দারা দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পায়, মুক্তিও পায়।
রাসূলে খোদা বলেছেন, এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দান করেন। তাহলে রোযা যেমন জাহান্নামে যাবার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তেমনি জাহান্নামে যাবার পরও সেখান থেকে মুক্তি লাভ করার সুযোগ সৃষ্টি করে। আল্লাহর এতো বড় রহমতের বিষয়টিকে যে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হবে-তার চেয়ে হতভাগ্য আর কে থাকতে পারে? অসাধারণ ফজিলত ও তাৎপর্যপূর্ণ মাহে রমযানে সমগ্র বিশ্বে মুসলমানদের ঈমানি চেতনা সুদৃঢ় হয়, তাকওয়া বা আল্লাহভীতির নিদর্শন প্রকাশ পায় এবং অত্যন্ত গভীরভাবে ধর্মীয় আবেগ-অনুভূতি সঞ্চারিত হয়। রমযান মাসে রোজা পালন করে খোদাভীরুতা অর্জনের মাধ্যমে সংযত আচরণ এবং আল্লাহর হুকুম পালনের যোগ্যতা অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া যায়। এ মাসে বন্দি করে রাখা হয় অভিশপ্ত শয়তানকে। অবারিত করা হয় রহমত লাভের সুযোগকে। (চলবে)
লেখক : সিনিয়র সহ সম্পাদক, আজকের সিলেট ডটকম