রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩৬

বিদায় নিল রহমত-মাগফেরাত ও নাজাতের মাস

রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

মাওলানা শাহিদ আহমদ হাতিমী

প্রকাশিত: ১০/০৪/২০২৪ ০৩:৪৪:০০

রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ


ঈদ! আজ সূর্যাস্তের সাথে বিদায় নিচ্ছে রমজান। ইতি হচ্ছে ১৪৪৫ হিজরির রোজা। থেমে যাবে এক বছরের জন্য ইফতারের বাহারি আয়োজন। মোটকথা, আজই শেষ হচ্ছে ২০২৪ সালের রোজা। আলহামদুলিল্লাহ, এবার আমরা পুরো ৩০টি রোজা পালন করছি। চাঁদের হিসেবে সব বছরে রমজান ৩০ হয় না। ২৯ রোজাতেও রমজান বিদায় নেয়। বেঁচে থাকলে আগামী বছর রমজান পাবো। ঈদ এর অর্থ হচ্ছে- ফিরে ফিরে বার বার আসে। ‘ফিতর’ শব্দের অর্থ ভেঙে দেওয়া, ইফতার করা। ঈদুল ফিতর মানে আনন্দঘন উৎসব, যা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে।

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে  বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.  থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, নবী করীম সা. বলেছেন, রমজানের জন্য বেহেশত সাজানো হয় বছরের প্রথম থেকে পরবর্তী বছর পর্যন্ত। তিনি বলেন, যখন রমজান মাসের প্রথম দিন উপস্থিত হয় বেহেশতের গাছের পাতা হতে আরশের নিচে বড় বড় চোখ বিশিষ্ট হুরদের প্রতি বিশেষ হাওয়া প্রবাহিত হয়। তখন তারা বলে, হে পালনকর্তা! আপনার বান্দাদের মধ্য হতে আমাদের জন্য এমন স্বামী নির্দিষ্ট করুন যাদের দেখে আমাদের চোখ জুড়াবে এবং আমাদের দেখে তাদের চোখ জুড়াবে।

ইসলামের দেওয়া দুটি আনন্দ- উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ঈদ আমাদের শিক্ষা দেয় ত্যাগের। ভেদাভেদ ভুলে যাওয়ার। শ্রেণিবৈষম্যের মূলোৎপাটন করার। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গরিব-ধনী এককাতারে চলার; কিন্তু আমরা কোন ধরনের সংস্কৃতির চর্চা করছি ঈদের আদলে? মানুষ আজ ঈদকে বানিয়ে ফেলেছে পার্থক্যের সুবিস্তৃত মাঠ। ঈদের দিনে মানুষ হয়ে যাচ্ছে মানুষ থেকে ভিন্ন। এলিট-নিম্নস্তরের মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে যোজন যোজন ফারাক। পৃথিবীর এ বিচিত্র পাঠশালার মধ্যে আমরা ভুলে যাচ্ছি আমাদের সভ্যতার সংস্কৃতি ও শিকড়ের শিক্ষা। আজকাল আমরা গলা টিপে হত্যা করছি আমাদের সভ্যতা ও শিকড়ের সংস্কৃতিকে। ঈদ এলেই ঈদের নামে চলে বেহায়াপনার প্রদর্শনী। ঈদ নাটক, ঈদ গান, ঈদের ছবি, ঈদ রেসিপি ও ঈদ ফ্যাশন বলে নোংরা সংস্কৃতির চর্চা করা হয়। সাত দিনব্যাপী চলে ঈদের নামে প্রহসন। চ্যানেলে চ্যানেলে ভাঁড়ামি, নষ্টামি প্রেম-পিরিতি নিয়ে চলে মাতামাতি। ইসলামের আবিষ্কৃৎত ঈদের উৎসবে থাকে না ইসলামের কোনো তাহজিব-তমদ্দুনের শিক্ষা। ইসলামের উদারতা, মানবপ্রীতি নিয়ে আলোচনা হয় না কোনো খবরের কাগজ কিংবা টিভি চ্যানেলে। ঈদ উপলক্ষে করা ঈদ সংখ্যায় স্থান পায় না কোনো ইসলামী ঈদ রচনা-প্রবন্ধ-নিবন্ধ। ফিচার বা প্রতিবেদন হয় না কোনো ইসলামী ঐতিহ্য নিয়ে। কিংবা কোনো বিষয় নিয়ে হয় না আলোচনা। ইসলামের দেওয়া ঈদ উৎসবে চলে ভিনজাতীয় নোংরা সব কালচারের প্রদর্শন। সপ্তাহব্যাপী চলে বেহায়াপনার তোড়জোড় আর আস্ফাালন।

রমজান মাসের ৩০ দিনের রোজার ৩০টি ফজিলত রয়েছে। পাঠকের জন্য প্রতিদিন রমজানের ফজিলত সম্পর্কে জানানো হয়। সে ধারাবাহিকতায় আজ জানানো হচ্ছে ৩০তম রোজার ফজিলত ও দোয়া। ৩০তম রমজানের রোজার ফজিলত সর্ম্পকে হাদিসে এসছে, 'পুরা রমজানের ফজিলত দ্বিগুন।'  হাদিসে শরীফে আরো এসেছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, যখন রমজানের প্রথম রাত আসে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই খোলা হয় না। বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। অতপর এর কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না। 

পুরো রামজানে বহু কথা বলা হয়েছে। আমরা এর সামান্যতমও যেনো আমল করি, আমলে নেই! তবেই এই নিয়মিত লেখালেখির স্বার্থকতা থাকবে। আমরা এবার রমজানকে বিদায় দিয়ে যেনো ফের আগামী বছরের রমজানকে বরণে প্রস্তুতি নেই। আশা রাখি আরও অনেকবার রমজান এবং ঈদ লাভ করার। আসুন গেয়ে উঠি- ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ! তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ/ দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ! ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

সিলেটের প্রথম নিবন্ধিত ও শীর্ষ অনলাইন নিউজপোর্টাল আজকের সিলেট ডটকম এর সকল পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভাকাঙ্ক্ষী সহ সবাইকে পবিত্র ঈদ উল ফিতর এর শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক। (সমাপ্ত)

লেখক : জৈষ্ঠ সহ সম্পাদক, আজকের সিলেট ডটকম।

সিলেটজুড়ে


মহানগর