৬ আগস্ট ২০২২
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : উপযোগী মাটি, আবহাওয়া, জলবায়ু ও উপযুক্ত পরিবেশ থাকায় মৌলভীবাজারের পাহাড়ি টিলা ভূমিতে বাণিজ্যিকভাবে এরাবিকা জাতের কফি চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। পরীক্ষামূলক ও সৌখিনভাবে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মাথিউড়া চা বাগানে কফি চাষ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ওই চা বাগানের ৪টি (চারটি) বাংলোর সামনে ৪০টি (চল্লিশ) এবং রাবার বাংলোর সামনেও অনেকগুলো কফির গাছ লাগানো হয়। সেসময় প্রায় ১ (এক) একর ভূমিতে পরীক্ষামূলভাবে সুদূর আফ্রিকা মহাদেশের ইতোপিয়ার এরাবিকা জাতের ১০ (দশ) হাজার কফির চারা লাগানো হয়েছিল। এ বছর সেগুলোতে ফল এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চা বাগানগুলোতে রাবার উৎপাদনের আর সুযোগ থাকবে না। চায়ের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে কফিচাষ রাবারের বিকল্প হতে পারে। কম খরচে কফিচাষে বেশি লাভবান হওয়া যাবে। যে মাটিতে অম্লমাত্রা বা ক্ষারত্ব আছে সে মাটিই কফি চাষের উপযোগী।
স্বাভাবিক বৃক্ষ রোপনের মতো কফির চাষ পদ্ধতি। গর্ত করে পর্যাপ্ত সার দিয়ে জমি প্রস্তুত করে চারা রোপন করতে হয়। নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে বৃক্ষ জাতের কফি গাছ বেড়ে উঠে। গাছে রোগ-বালাইয়ের তেমন আক্রমণ থাকে না।
কফি বাজারে নতুন ব্যবসায়ের সম্ভাবনা দেখে কফি চাষের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন মৌলভীবাজারের চা-বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর মাথিউড়া ও সদর উপজেলার সিরাজনগর চা বাগানে তা শুরু হয়েছে।
মাথিউরা চা বাগানের শ্রমিক নেতা বাবুলাল জানান, বাজারে কফির একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। তবে দুর্ভাগ্য যে কফি প্রসেসিংয়ের ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল।
মাথিউরা চা বাগানের ম্যানেজার মো. সিরাজুদৌলা বলেন, তারা পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কফির চারা লাগিয়েছেন। অনেক গাছে ফলও ধরেছে। দুটি উপায়ে কফি সংগ্রহ করা হয়। একটি কাঁচা কফি এবং অন্যটি পিষ্ট। কাঁচা কফির ক্ষেত্রে, এটি পান করার আগে মেশিনে গুঁড়া করা প্রয়োজন। আমি সিদ্ধ করে গুঁড়া করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। যদি গুঁড়া করার ভালো প্রসেসিং পাওয়া যেত তাহলে এটি পানের উপযোগী হতো।
বিশিষ্ট টি প্লানটার উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ ইবাদুল হক বলেন, চা বাগানের খালি ভূমিতে কফি গাছ লাগানো যেতে পারে। মৌলভীবাজারের চা বাগানের মাটি ও আবহাওয়ায় এরাবিকা জাতের কফি চাষ উপযোগী।
চা বাগানে রাবার চাষে সরকারি নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাবার চাষের পরিবর্তে কফি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। বিভিন্ন সঙ্কটের কারণে চায়ের দাম দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। সুতরাং চা বাগানের জমির সুস্থ ব্যবহারের জন্য কফি একটি অর্থনৈতিকভাবে টেকসই বিকল্প হতে পারে। চা শ্রমিকরাই কপি চাষে পরির্চযা করতে পারেন। এর জন্য আলাদা শ্রমিক নিয়োগের দরকার হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমার জানামতে মাথিউরা চাবাগানে বিভিন্ন ধরনের ১০ হাজার কফি গাছ লাগানো হয়েছিল। তা পরীক্ষামূলকভাবে লাগানো হয়। ইতোমধ্যে সেগুলোতে ফল আসতে শুরু করেছে। একটি গাছ থেকে ২০০-৩০০ গ্রাম কফি সংগ্রহ করা যায়। ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে কফি পাকা শুরু হয়।
মৌলভীবাজারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বলেন, বাংলাদেশি এবং বিদেশি উভয় বাজারেই কাঁচা কফির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে একটি প্রবণতা দেখা দিয়েছে, বেশিরভাগ নিম্নবর্ণের লোকেরাই চা পান করেন। আর কফি যেন উচ্চবিত্তদের পানীয়। বাজারে এবং তরুণদের মধ্যে কফির চাহিদা বাড়ছে, এর মধ্যে নারীদের বেশি পছন্দ কফি। নতুন প্লানটেশনে কফি চাষ অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আশা জাগাবে।
মৌলভীবাজার জেলার মাটিতে পর্যাপ্ত অম্লমাত্রা থাকায় পাহাড় টিলা ভূমিতে কফি চাষের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার উপযুক্ত ভূমিতে কফি চাষের জন্য আগ্রহী কৃষক ও চা বাগানে উৎসাহ প্রদানের জন্য এক হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে। কফি চাষ মাটি এবং যত্নের ওপর নির্ভর করে। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক নিজেও এ জেলায় কফি চাষ জনপ্রিয় করতে তার প্রয়োজনীয় মতামত প্রকাশ করেছেন। তবে কফি চাষের একটি প্রজেক্ট মৌলভীবাজারে হওয়ার কথা থাকলেও তা সিলেটে নেওয়া হয়েছে।