২৮ মার্চ ২০২৩


রহমতের পঞ্চম দিন : রামজানের দান-খয়রাতে আল্লাহ অনেক খুশি হন

শেয়ার করুন

শাহিদ হাতিমী : আজ পঞ্চম রামজান। বর্ণিত হয়েছে- ৫ম রামজানে রোজাদারকে মক্কা নগরীর মসজিদে হারামে তথা পবিত্র বায়তুল্লাহে নামাজ আদায়ের সাওয়াব দেয়া হয়। দেখতে দেখতে মুসলিম উম্মাহ অতিক্রম করছে ৫টি রোজা। আমাদের থেকে রহমতের দশকের প্রথম ধাপ শেষ। কিন্তু মহান রবের কতোটুকু রহমত লাভে ধন্য হয়েছি আমরা! আমাদেরকে মহান স্রষ্ঠার রহমত অর্জনের জন্য ব্যাপকভাবে উৎসাহিত হওয়া উচিত। আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত লাভে একটা উত্তম মাধ্যম হতে পারে মুক্তহস্তে সাদাকাহ তথা দান খয়রাত করা। হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন রমযান মাস আসে তখন আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। (বুখারী শরীফ, হাদীস নং-১৮৯৯) অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, শয়তানকে শিকলে বন্দী করা হয়। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রহমতের দরজা খুলে দেয়া হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১০৭৯)।

রোযার ফযিলত সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়েছে- রোযার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজে প্রদান করবেন। হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, বনী আদমের সকল আমল তার জন্য, অবশ্য রোযার কথা আলাদা, কেননা রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দিব।’’ (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮০৫, ৫৫৮৩ ও সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৬০)। রোযা রাখা গোনাহের কাফফারা স্বরূপ এবং ক্ষমালাভের কারণ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রামাজান মাসে রোযা রাখবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’’

রামজানের দান খয়রাত করা আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়। বঞ্চিতদের দিকে হাত বাড়ালে আল্লাহ তায়ালাও আপনার দিকে রহমতের হাত বাড়িয়ে দেবেন; এটা আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুতি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “আর তাদের (ধনীদের) অর্থ-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে”। (সূরা আল-জারিআত, আয়াত ১৯) গরিবদের দান-খয়রাত করা কোনো করুণার ব্যাপার নয়; বরং দান হলো নিজের আমলনামাকে সমৃদ্ধ করার সর্বোত্তম উপায়। মনে রাখতে হবে গরিবদের সম্পদহীন করে আল্লাহ যেমন তাদের পরীক্ষা করেন, তেমনি ধনীদেরও ধন-সম্পদ দিয়ে আল্লাহ পরীক্ষা করেন। দান-ছাদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে (সহীহুল জামে/৫১৩৬)।

পূতপবিত্র নিয়তে, দায়িত্ব মনে করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে যদি দান করা হয়, তাহলে তার ব্যাপক ফজিলত রয়েছে। এসব ফজিলতের কিছুটা পার্থিব এই পৃথিবীতেও লক্ষ্য করা যায়, তবে বেশিরভাগ ফজিলতই পরবর্তী জীবনের পাথেয় হিসেবে জমা থাকে। এছাড়া এ জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারও পাবেন দানকারীরা। এ কারণেই দয়াময় আল্লাহ কুরআনে কারিমে দান-খয়রাতের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে দানের ব্যাপারে নিয়তের স্বচ্ছতার কথা বলেছেন। দান করার কিছু নীতিমালা আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে ঘোষণা করেছেন। যেমন, দান করতে হবে শুধু আল্লাহ তায়ালার জন্য। কাউকে দেখানোর জন্য নয়। দান-খয়রাত করে ভবিষ্যতে কোনো স্বার্থ হাসিলের নিয়ত করা যাবে না। আত্মপ্রদর্শনের উদ্দেশ্য কৃত দানকে নিকৃষ্টতম দান বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে ইসলামে।

এছাড়া যাকে দান করা হলো তার কাছ থেকে এর বিনিময়ে কোনো সুযোগ-সুবিধাও গ্রহণ করা যাবে না। কোনো প্রকার অপচয় না করে রোজার মাসে মানুষের সেবায় দান-সাদকা করলে অভাবক্লিষ্ট মানুষের কল্যাণ হয় এবং মানবতা উপকৃত হয়। রাসুলুল্লাহ সা. সমগ্র মানবকুলের মধ্যে সর্বাধিক উদার ও দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে যখন হজরত জিব্রাইল আ. নিয়মিত আসতে শুরু করতেন, তখন তাঁর দানশীলতা বহুগুণ বেড়ে যেত। (বুখারি) হজরত আনাস রা. বলেছেন, আমি নবী করিম সা.-এর চেয়ে কাউকে অধিকতর দয়ালু দেখিনি। (মুসলিম) সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রোজাদারের অন্তরে দানশীলতা ও বদান্যতার গুণাবলি সৃষ্টি হতে পারে। রাসুল সা. বলেছেন দান হচ্ছে দলীল। দলীল দ্বারা যেমন জমি দখল করা যায় তেমনি দান দিয়ে জান্নাত দখল করা যায়।

নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয় হলেও নামাজ-রোজা আদায় করা যাচ্ছে স্বাভাবিকভাবে। সুতরাং এখনই সময় আল্লাহর গজব থেকে পানাহ চাওয়ার। এখনই আমাদেরকে মারামারি হানাহানি ছেড়ে ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন হতে হবে। মুসলিম পুরুষদের হতে হবে মসজিদমুখী। আসুন রহমতের দশকে, আমরা মহান আল্লাহর রহমত এবং নৈকট্যলাভে মনোযোগী হই। (চলবে…)

(লেখক : জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক, আজকের সিলেট ডটকম)

শেয়ার করুন