২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১


ভাষাসংগ্রামের ৬৯ বছর পর হচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

শেয়ার করুন

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছরেও হবিগঞ্জ জেলা সদরে কোনো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। যুগ যুগ ধরে সরকারি বৃন্দাবন কলেজের শহীদ মিনারই মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। অবশেষে জেলায় হচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় এ উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হচ্ছে জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দক্ষিণাংশে প্রায় ৫ শতাংশ জমির উপর এ শহীদ মিনারটি নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। প্রথমে এ প্রকল্পের জন্য টিআর-কাবিখা’র ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ মেলে। পরে জেলা প্রশাসক ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। সর্বশেষ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ১ দিনের বেতন দেয়া হয়।

এমন উদ্যোগের খবরে একে একে এগিয়ে আসতে থাকেন বিভিন্ন ব্যক্তি, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। যে যার সাধ্যমতো এতে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও সহায়তা এসেছে। প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।

জেলার প্রাচীন নাট্য সংগঠন খোয়াই থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন খাঁ বলেন, ‘জেলা সদরের আপামর জনতা সব সময়ই বৃন্দাবন সরকারি কলেজের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি, একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তৈরির জন্য। আগে একটি স্থান নির্ধারণও করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক তার কার্যালয় প্রাঙ্গণে একটি শহীদ মিনার তৈরি করছেন। আমাদের দাবি ছিল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে না হয়ে যদি অন্য কোথাও হতো, তাহলে ভালো হতো। একটি আবদ্ধ জায়গায় না হয়ে অন্য অনেক স্থানেই অনেক খোলামেলা জায়গা আছে। যেখানে অনেক বেশি মানুষ জড়ো হতে পারে। আমরা এখনও দাবি জানাই, সেসব খোলা জায়গায় যেন এটি হয়।’

তবে তরুণ আইনজীবী শামীম আহমেদ বলেন, ‘ভাষার দাবি আদায়ের ৬৯ বছর পর একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তৈরি হচ্ছে, এটিই বড় কথা। আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারবো, এতেই আমরা গর্বিত।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ যে হবিগঞ্জে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হচ্ছে। কিন্তু এটি যেখানে হচ্ছে তা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় আবদ্ধ রয়েছে। আমরা মনে করি উন্মুক্ত স্থানে যদি একটি শহীদ মিনার হয় তবে সেটি অনেক বেশি সুন্দর ও অনেক বেশি কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকতে পারে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এখানে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার না থাকায় সকলের চাহিদার ভিত্তিতে, সবার মতামত নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কোনো প্রকার সরকারি সহযোগিতা ছাড়াই বিভিন্ন ব্যক্তি, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় এটি নির্মিত হচ্ছে। আশা করছি এ বছরই প্রথমবারের মতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ করা সম্ভব হবে।’

হবিগঞ্জের লেখক ও গবেষক কবি পার্থ সারথি রায়ের একটি লেখা থেকে জানা যায়, ১৯৫২ সালেই বৃন্দাবন সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে সর্বপ্রথম বাঁশ দিয়ে একটি শহীদ মিনার তৈরি করেন অধ্যাপক সামছুদ্দিন আহমেদ। ‘দাঁড়াও পথিক বর, হের একটি বার, এখানে ঘুমিয়ে রয়েছে, সন্তান মোর মার’ লিখে তিনি সেখানে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে এটি পাকা করা হয়। এরপর থেকে এখানেই জেলা সদরের সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শেয়ার করুন