২১ নভেম্বর ২০২৩
চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি সত্যি অপূর্ব। লেকের ঝলমল জল, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা-শালুকের উপস্থিতি আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে পরিবেশ। ছবি : সংগৃহীত
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : সুনীল আকাশ, গাঢ় সবুজ পাহাড়, শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো মনোরম চা বাগানের দৃশ্যে যে কেউ মনের গহিনে হারিয়ে যাবে আপন মনে। চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি সত্যি অপূর্ব। লেকের ঝলমল জল, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা-শালুকের উপস্থিতি আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে পরিবেশ। আর এই লেকটি দর্শন করতে হলে আপনাকে যেতে হবে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অবস্থিত মাধবপুর লেকে।
আরও পড়ুন – মৌলভীবাজারে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ : অভিযুক্ত তরুণ চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার
এ লেকের রয়েছে নিজস্ব সৌন্দর্য। যার কারণে এর আকর্ষণ উপেক্ষা করতে পারেন না পর্যটকরা। লেকে ভেসে বেড়ায় বড় বড় কচ্ছপ আর মাছ। টিলার মধ্যেই টলমলে জলের হ্রদ। হ্রদে ভাসছে শাপলা-শালুক। ছায়াবৃক্ষের ডালে বসে ডাকছে পাখিরা। প্রকৃতিপ্রেমীরা এ লেকে এসে খুঁজে পান অপার শান্তি। আর মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন নিঃস্বর্গের নিস্তব্ধতা, সৌন্দর্য আর ভালোবাসা।
হ্রদের দুপাশের টিলাগুলোতে চায়ের গাছ। চা-বাগান যেন হ্রদকে দুই পাঁজর দিয়ে আগলে রেখেছে। এটি মূলত মাধবপুর চা-বাগানেরই অংশ। চা-গাছের ফাঁকে ফাঁকে চিরল পাতার ছায়াবৃক্ষ। হ্রদের তীরঘেঁষে চেনা-অচেনা অনেক ঝোপঝাড়। ঝোপঝাড়ে ফুটে আছে হরেক রকমের মায়া লাগা বুনো ফুল। হ্রদের পাড়ে পাড়ে চা-গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। হ্রদের পাড়ঘেঁষে হাঁটার জন্য চা-বাগান কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছে সরুপথ। টিলার ওপর আছে তাঁবু। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্তি পেলে এখানে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। শীত মৌসুমে যেকোনো জায়গায় বসা যায়। কিন্তু বর্ষায় হয় তাঁবু, নয়তো সঙ্গের ছাতাটিই ভরসা। টিলার ওপর থেকে যেদিকেই চোখ যায়, দেখা মেলে বনের নীলরেখা। অনেক দূরে গিয়ে নীলরেখা যেন ছুঁয়েছে আকাশের সীমা! মাধবপুর লেকে একসঙ্গে জল, পাহাড়, চা-বাগান, আর বুনো নির্জনতার আমেজ মেলে। প্রকৃতির এমন মেলবন্ধন কোথায় মেলে!
আরও পড়ুন – হবিগঞ্জে টমটম স্ট্যান্ড নিয়ে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ : পুলিশসহ আহত ৩০
প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘের মাধবপুর লেকের আয়তন ৫০ একর। লেকের পাশাপাশি উঁচু উঁচু টিলা। সমতল চা বাগানে গাছের সারি। পাহাড়ি পাখির গান আর নৃত্য ছাড়াও দেখা যায় নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী। মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে তৈরি মায়াবী স্বর্গ। শীত মৌসুমে দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক, শিক্ষার্থীসহ ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নামতে শুরু করে। লেকের প্রবেশপথটি শুধু পর্যটকদের জন্য পাকা ও আকর্ষণীয় করা হয়েছে। পর্যটকরা যাতে হেঁটে লেকটি দেখতে পারেন, সেজন্য লেকের চারপাশে টিলার উপর উঠতে সিঁড়ি করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা লেকসিটি থেকে কমলগঞ্জে বেড়াতে আসা আকাশ জামান বলেন, ‘এখানে এসেই প্রশান্তিতে ভরে গেল মন। লেকের শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ, চারপাশে বড় বড় গাছ, চা-বাগান সব মিলে এখানকার পরিবেশটাই অন্যরকম। এর আকর্ষণ উপেক্ষা করা কঠিন। মনটা পড়ে আছে এখানে বারবার আসতে মন চায় এ চা-বাগানের লেকে। তবে এখন চলে যাচ্ছি, আবার আসব।’
মাধবপুর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান মুন্না বলেন, ‘প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের অপার লীলা নিকেতন মাধবপুর লেক দেখতে প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে অসংখ্য লোকের ঢল নামে। লেকের কাছে ন্যাশনাল টি কোম্পানির একটি চা বিক্রয় কেন্দ্রও রয়েছে।’
এএস // আতারা